০৬ জানুয়ারি ২০২৫

Assam Shrine Saw Hindu-Muslim Unity on Mahashivratri

সীমার বাইরে বিশ্বাস:ভঙ্গুরি বাবার থানে পুজো ও দোয়া একসঙ্গে উচ্চারিত!

ভক্তির কি কখনো কোনো জাত পাত হতে পারে? গুয়াহাটিতে ভঙ্গুরিবাবার থানে মহাশিবরাত্রি তে হিন্দুরা পুজো দেন, এবং মুসলিমরা দোয়া পাঠ করেন। ৫০০ বছরের মন্দিরের মুসলিম রক্ষক, মতিবার রহমান, বিরল ব্যাপার।

মহাশিবরাত্রিতে সম্প্রীতির প্রতীক রঙমহলের ভাঙ্গুরী বাবা থান

  • মহাশিবরাত্রি উপলক্ষে যখন সারা দেশে ভক্তরা তাদের উপাসনা করছেন, তখন উত্তর গুয়াহাটীর রঙমহলের একটি শতাব্দীপ্রাচীন মন্দির ব্যতিক্রমী সম্প্রীতির প্রতীক হিসেবে বিশেষভাবে নজর কাড়ে।
  • মহাশিবরাত্রিতে হিন্দুরা যেমন বাবার মাথায় দুধ ঢেলে পূজা করছে, ঠিক সেখানেই মুসলিমরা বাবার সামনে বসে নামাজ পড়ছে।
  • কেউ প্রসাদ (নৈবেদ্য) নিবেদন করেন, আবার কেউ ভাঙ (গাঁজার তৈরি এক বিশেষ উপাদান) উৎসর্গ করেন, যা শিব উপাসনার একটি অংশ। এই ভিন্নতাগুলো একসঙ্গে মিলিত হয়ে এক অনন্য ধর্মীয় পরিবেশ তৈরি করেছে এখানে।
  • সারা দেশে যখন সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামা নিয়ে উত্তাল তখনি আসামের এই থান আমাদের সামনে তুলে ধরছে এক অন্য চিত্র। এক মুসলিম পরিবারের দেখাশোনায় নিশ্চিন্তে সেখানে অধিষ্ঠান করছেন ভগবান শিবI
  • বিশ্বাস করা হয় যে এই মন্দিরটির বয়স ৫০০ বছরেরও বেশি। বহু প্রজন্ম ধরে এটি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করছে মুসলিম পরিবার। বর্তমানে ৯০ বছরের বেশি বয়সী মোতিবার রহমান মন্দিরের দেখা শোনা করেন ।
  • মোতিবার রহমান প্রতি বছর মহাশিবরাত্রির আয়োজন ব্যক্তিগতভাবে তত্ত্বাবধান করেন, যাতে মন্দিরের ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ থাকে।
  • ভাঙ্গুরী বাবার থান-এর বিশেষত্ব হলো এখানকার ভক্তি প্রদর্শনের বৈচিত্র্য।
  • শিব ঠাকুর নাকি তার মামা, মোতিবার রহমান ভালোবেসে ভগবান শিবকে ‘মামা’ (কাকা) বলে সম্বোধন করেন এবং তিনিই প্রতি বছর শিবরাত্রির নেতৃত্ব দেন। এর ফলে হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন আরও দৃঢ় হয়।

সম্প্রীতির বার্তা বহনকারী ভারতের কিছু তীর্থস্থান

  • ভারত তার ধর্মীয় বৈচিত্র্য, বহু সংস্কৃতির সহাবস্থান এবং সম্প্রীতির জন্য সুপরিচিত। শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই দেশে এমন বহু তীর্থস্থান গড়ে উঠেছে, যেখানে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ একসঙ্গে উপাসনা করেন, উৎসব উদযাপন করেন এবং সম্প্রীতির বার্তা বহন করেন।
  • অজমের শরীফ দরগা, রাজস্থান- অজমের শরীফ দরগা হযরত খ্বাজা মইনুদ্দিন চিশতী, যা হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে সকলের জন্য পবিত্র স্থান। প্রতি বছর উরস উৎসবে লক্ষ লক্ষ ভক্ত এখানে এসে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
  • কেদারনাথ মন্দির, উত্তরাখণ্ড- কেদারনাথ মন্দির, যা হিন্দু ধর্মের অন্যতম পবিত্র স্থান, তার রক্ষণাবেক্ষণে বহু মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ যুক্ত আছেন। শীতের সময় মন্দির বন্ধ থাকলে মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনই মন্দিরের দেখাশোনা করেন, যা ধর্মীয় সহাবস্থানের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।
  • হাজি আলি দরগা, মুম্বাই- সমুদ্রের বুকে অবস্থিত হাজি আলি দরগা ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় সম্প্রীতির প্রতীক। এখানে হিন্দু, মুসলিম, শিখ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ মানত করতে আসেন। দরগাটি সুফি সংস্কৃতির এক অনন্য নিদর্শন, যেখানে সবার জন্য প্রার্থনার দ্বার উন্মুক্ত থাকে।
  • গুরুদ্বারা নানক ঝীরা সাহিব, কর্ণাটক- এই গুরুদ্বারাটি শিখ ধর্মের প্রথম গুরু, গুরু নানক দেবজির স্মৃতিবিজড়িত স্থান। তিনি ভারতের বিভিন্ন স্থানে সফর করার সময় এখানে বিশ্রাম নেন এবং স্থানীয় জনগণকে ভ্রাতৃত্ববোধ ও শান্তির বার্তা দেন। বর্তমানে হিন্দু ও মুসলিমরা এখানে সমানভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, যা ধর্মীয় সম্প্রীতির এক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।

.

ব্রডকাস্ট চ্যানেল

ডেইলি ডিজিটাল নিউজ পেপার