০৬ জানুয়ারি ২০২৫

ভারতের কিছু গোপন সমুদ্র সৈকত- নৈসর্র্গিক সাথে নিরিবিলি

বিচ বলতেই খালি পুরী, দীঘা? লোক গিজগিজে সৈকত থেকে মুক্তি পেয়ে যেতে চান কোন নির্জন কিন্তু সুন্দর সৈকতে? খোঁজ রইল এখানে।

বাটারফ্লাই বিচ, গোয়া- কোলাহল থেকে অনেক দূরে

  • গোয়া বলতেই দিনের বেলায় সমুদ্র সৈকত, লোকজনের ভীড় আর মনোরম দৃশ্য আর রাত্রে পার্টি। শুধু যদি ভাবা হয় এইসব নিয়েই গোয়া তাহলে ভূল ভাবছেন।
  • গোয়াতে এমন স্থানও আছে যা লোকচক্ষুর আড়ালে, যেখানে সমস্ত সমুদ্র সৈকতে থিকথিকে ভীড়, পার্টির রমরমা থেকে যেন অনেক দূরে। গোয়ার দক্ষিণ উপকূলের ব্যস্ত এলাকা থেকে দূরে অবস্থিত এই লুকানো স্থান বাটারফ্লাই বিচI
  • উড়ন্ত প্রজাপতিতে ভরা, নরম সোনালী বালি, দুলন্ত তালগাছের ঝাঁক এই বিচকে গোয়ার অন্য জে কোন বিচ থেকে আলাদা করেছে। সৈকতটি উভয় প্রান্তে পাথুরে খাড়া পাহাড় দ্বারা আচ্ছন্ন, যা একদিকে যেমন নির্জনতার অনুভূতি দেয় তেমনি অন্যদিকে গোপনীয়তার অনুভূতি প্রদান করে।
  • দক্ষিণ গোয়ায় অবস্থিত এই চাঁদের আকৃতির উপসাগরটি শুধুমাত্র পালোলেম বা আগোন্ডা থেকে নৌকায় অথবা গভীর জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে চ্যালেঞ্জিং ট্রেকের মাধ্যমেই পৌঁছানো যায়।
  • নির্জনতা, সবুজ বন, পাহাড়ি দৃশ্য, এবং মাঝে মাঝে উড়ে বেড়ানো প্রজাপতির ঝাঁক গোয়ার এই সৈকতকে যেন অন্যরকম আকর্ষণীয় করে তোলে।
  • সবথেকে বড়ো ব্যাপার এখানে কোনো রিসোর্ট বা রেস্তোরাঁ নেই, যা এটিকে পর্যটনমুক্ত ও শান্ত রাখে। ফলে আপনাকে ঐদিন গিয়ে সেইদিনকেই ফিরে আসতে হবে। এই সৈকতে প্রচুর ছোট জলজ ও উভচর প্রাণীরও দেখা মেলে।
  • গোয়া ঘুরতে গেলে কিন্তু এখানে এয়াডভেঞ্চার করতে কিন্তু যেতেই পারেন।

কালো বালির বিচ তিলমাটি বিচ, কর্ণাটক

  • ভারতের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে বিস্ময়। তেমনি বিস্ময় দিয়ে ঘেরা এক বিচ কর্ণাটকের কালো বালির তিলমাটি বিচ।
  • তিলমাটি" নামের অর্থই হলো "তিলের মতো বালি," কারণ এখানকার বালি দেখতে ছোট কালো তিলের দানার মতো। এই ব্যতিক্রমী বৈশিষ্ট্যের কারণেই কর্ণাটকের সৈকতটি ভ্রমণপ্রেমী ও প্রকৃতিপ্রেমীদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়।
  • ঘন সবুজ বন ও পাহাড়ি পথ পেরিয়ে কর্ণাটকের সৈকতে পৌঁছানোর রোমাঞ্চ নিজেই এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা। কেউ চাইলে কাছের মন্দাঙ্গা বিচ থেকে নৌকায় করেও এখানে পৌঁছাতে পারেন।
  • ভারতের বেশিরভাগ সৈকত সোনালি বা সাদা বালির জন্য পরিচিত, কিন্তু তিলমাটি বিচের গাঢ় কালো বালি যেন একে ভিন্নমাত্রা দিয়েছে। জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্রগুলোর মতো এখানে কোনো ভিড় নেই, তাই প্রকৃতির নির্জনতা এখানে নিঃশব্দে উপভোগ করা যায়।
  • সম্ভবত পার্শ্ববর্তী পাহাড় থেকে ক্ষয়প্রাপ্ত শিলার ফলেই কালো বালির উৎপত্তি হয়েছে এখানে।
  • ঐতিহাসিকদের মতে, মারাঠাদের রাজত্বকালে তিলমাটি কর্ণাটক অঞ্চলে জনপ্রিয় ছিল। পরে, এটি উত্তর ক্যানারা এবং গোয়ার সীমান্তে পরিণত হয়। এই অঞ্চল ভারতীয় স্বাধীনতার আগে ব্রিটিশ এবং পর্তুগিজদের দ্বারা শাসিত হত।
  • এখানে মূলত পর্যটকরা ট্র্যাকিং করতেই আসে। তবে কোন খাবারের দোকান বা থাকার স্থান এখানে নেই।

কর্ণাটকের গোপন রত্ন প্যারাডাইস বিচ, গোকর্ণ

  • শুধু প্রকৃতির শান্তি ও সমুদ্রের অবিরাম গর্জন শুনতে চান তাহলে এই বিচ আপনার জন্যই। কর্ণাটকের গোকর্ণ শহরের বুকে লুকিয়ে আছে এক অপূর্ব স্বর্গ—প্যারাডাইস বিচ। সোনালি বালির এই নির্জন কর্ণাটকের সৈকতটি প্রকৃতিপ্রেমীদের জন্য এক আদর্শ গন্তব্য।
  • এই বিচে পৌঁছানোর জন্য মূলত দুটি পথ রয়েছে—একটি হলো পাহাড় ও জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে ট্রেকিং করা, আর অন্যটি হলো নৌকায় চড়ে ওম বিচ থেকে যাত্রা করা। এই সমুদ্র সৈকতে পৌঁছাবার পর এর নৈসর্র্গিক দৃশ্য আপনার মন ভালো করে তুলবে।
  • প্যারাডাইস বিচের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হলো এর সম্পূর্ণ নির্জনতা। এখানে বসে সূর্যাস্ত দেখলে মন এক অসাধারণ প্রশান্তিতে ভরে উঠতে বাধ্য। নিজের কাছের মানুষের সাথে সময় কাটাতে এর থেকে ভালো সমুদ্র সৈকত আছে কিনা সন্দেহ। মাঝে মাঝে দু-একজন পর্যটক নারকেল গাছের মাঝে দোলনা ঝুলিয়েও একান্ত মুহূর্ত কাটান।
  • যেহেতু এখানে কোনো আধুনিক সুবিধা নেই, তাই পর্যটকদের নিজেদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, যেমন—খাবার, জল, এবং প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম সঙ্গে আনতে হবে। আর আধুনিক কোন সুবিধার ব্যবস্থা নেই বলেই এই স্থান জেন আরও চুপচাপ।

অন্ধ্রপ্রদেশের নিরিবিলি আশ্রয় ইয়ারাদা বিচ

  • শহর থেকে মাত্র ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ইয়ারাদা বিচ প্রকৃতির এক অপূর্ব সৃষ্টি। সুবিশাল সবুজ পাহাড়ের কোলে মোড়ানো এই সোনালি বালির সৈকত এক শান্ত, নিরিবিলি পরিবেশ তৈরি করেছে, যারা প্রকৃতিপ্রেমী ও নির্জনতা পছন্দ করেন তাদের জন্য এটি আদর্শ স্থান।
  • এই সৈকতের প্রধান আকর্ষণই হলো এর স্বচ্ছ নীল জলরাশি ও ধীরে ধীরে ঢেউ আছড়ে পড়ার মৃদু শব্দ, যা মনকে প্রশান্তিতে ভরিয়ে দেয়। অন্যান্য জনপ্রিয় সৈকতের তুলনায় ইয়ারাদা বিচ অনেক কম পরিচিত, তাই এখানে পর্যটকদের ভিড়ও তুলনামূলকভাবে কম।
  • এই বিচে গেলে হাজার মানুষের স্নান বা ভেন্ডারদের চিল্লামিল্লি না বরং স্থানীয় জেলেদের মাছ ধরার দৃশ্য, নৌকাগুলোকে ঢেউয়ের তালে দোল খেতে দেখা, আর হালকা বাতাসের পরশ—সব মিলিয়ে এটি এক অনন্য অভিজ্ঞতা প্রদান করবে। যা কোন ভাবেই অন্য বিচে পাওয়া যাবে না।
  • খানে বড় কোনো রিসোর্ট বা আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নেই, তবে কাছাকাছি কিছু ছোট গ্রাম্য রেস্তোরাঁয় তাজা সামুদ্রিক খাবার পাওয়া যায়, যা এখানকার আরেকটি বিশেষ আকর্ষণ।

ভারতের মালদ্বীপ বঙ্গারাম দ্বীপ, লক্ষদ্বীপ

  • ভারতেই রয়েছে মালদ্বীপের খোঁজ। আর যেতে হবে না মালদ্বীপ। নীল জলের মাঝে এক স্বপ্নময় স্বর্গ হল বঙ্গারাম দ্বীপ। প্রবালপ্রাচীর দিয়ে ঘেরা এই দ্বীপকে অনেকেই "ভারতের মালদ্বীপ" বলে থাকে।
  • এখানকার সাদা বালির সৈকত, স্বচ্ছ নীল জল, এবং নির্জন পরিবেশ এক অবিস্মরণীয় প্রাকৃতিক সোন্দর্জের অভিজ্ঞতা প্রদান করে।
  • দ্বীপটিতে পর্যটন নিয়ন্ত্রিত, ফলে বিশাল ভিড় বা কোলাহল নেই। এখানে আসতে হলে আগাত্তি দ্বীপ থেকে বিশেষ অনুমতি নিতে হয়, এবং নৌকায় যাত্রা করতে হয়, যা এই সৈকতকে আরও একান্ত করে তুলেছে।
  • এখানে স্নরকেলিং বা স্কুবা ডাইভিংএর ব্যাবস্থা আছে। স্কুবা ডাইভিং করলে রঙিন প্রবালপ্রাচীর, নানা প্রজাতির মাছ, এমনকি সামুদ্রিক কচ্ছপও দেখা যায়, এটি এখানকার অন্যতম আকর্র্শন।
  • যারা প্রকৃত নির্জনতা ভালোবাসেন এবং প্রকৃতির কাছাকাছি সময় কাটাতে চান, তাদের জন্য বঙ্গারাম এক আদর্শ গন্তব্য।

.

ব্রডকাস্ট চ্যানেল

ডেইলি ডিজিটাল নিউজ পেপার