বিবাহ সাইটে প্রতারণা হুগলিতে ৩ কোটি টাকার ফাঁদ

বিবাহ সাইটে ভালোবাসার ফাঁদ পেতে প্রতারণা চক্রের দাপট! হুগলিতে নকল প্রোফাইলের মাধ্যমে অন্তত ২০ জন মহিলার কাছ থেকে প্রায় ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এক সাইবার চক্র। আবেগ, মিথ্যা পরিচয় ও বিয়ের প্রতিশ্রুতি দেখিয়ে অর্থ হাতানোর অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছে তিনজন অভিযুক্ত।

প্রেমের ফাঁদে ফেলে কোটি টাকার প্রতারণা!

• বিবাহ সাইটে তৈরি ভুয়ো প্রোফাইলের মাধ্যমে মহিলাদের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলত প্রতারকরা।
• মিষ্টি কথায় বিশ্বাস অর্জন করে ধীরে ধীরে অর্থের প্রলোভনে টানত তারা।
• বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে মহিলাদের মনে আবেগ সৃষ্টি করে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করত।
• প্রতারকরা নিজেদের ব্যবসায়ী, এনআরআই বা কল-মালিক হিসেবে পরিচয় দিত।
• প্রায় ২০ জন মহিলা এই প্রতারণার শিকার হয়ে মোট ৩ কোটি টাকা হারিয়েছেন।
• হুগলি গ্রামীণ পুলিশের তদন্তে ধরা পড়ে এই সুপরিকল্পিত ভালোবাসার ফাঁদ।

সিঙ্গুরের তরুণীর অভিযোগেই ফাঁস গোটা চক্র!

• সিঙ্গুরের ২৯ বছরের এক তরুণী অভিযোগ দায়ের না করলে হয়তো চক্রটি রয়ে যেত অজানা।
• তিনি অনুপম রায় নামে এক ভুয়ো প্রোফাইলের সঙ্গে বিবাহ সাইটে পরিচিত হন।
• প্রতারক দাবি করে সে বর্ধমানের কল-মালিক, যার পিতামাতা মৃত এবং একা থাকে।
• ধীরে ধীরে বিশ্বাস অর্জন করে, জানুয়ারিতে আয়কর সমস্যার অজুহাতে টাকার দাবি করে।
• ভবিষ্যৎ স্বামীকে সাহায্য করছেন মনে করে তরুণী ও তাঁর পরিবার টাকা পাঠান।
• ভিডিও কলে মুখ না দেখানোয় সন্দেহ হলে তিনি পুলিশের দ্বারস্থ হন।

পুলিশের সাইবার টিমের জালে তিন অভিযুক্ত!

• হুগলি গ্রামীণ পুলিশের সাইবার বিশেষজ্ঞরা প্রথমে ঘটনাটিকে সাধারণ প্রতারণা মনে করেছিলেন।
• তদন্ত বাড়তেই সামনে আসে অন্তত ২০ জন মহিলার আবেগ জড়ানো এক বিশাল চক্র।
• ৩২ বছর বয়সী মডেল অভিষেক রায়কে প্রথমে গ্রেফতার করে পুলিশ।
• তাঁর সূত্র ধরে ধরা পড়ে ৪১ বছর বয়সী জহির আব্বাস, এরপর চক্রনেতা জামির আব্বাস।
• জামিরকে মন্দারমণির একটি রিসর্ট থেকে গ্রেফতার করা হয় ১৪ অক্টোবর।
• এই তিনজনের মাধ্যমেই গোটা প্রতারণা চক্র পরিচালিত হত বলে জানিয়েছে পুলিশ।

দক্ষিণী মডেলদের ছবি ব্যবহার করে গড়া নকল প্রোফাইল!

• চক্রের সদস্যরা দক্ষিণ ভারতের মডেলদের ছবি ও ভিডিও অবৈধভাবে ব্যবহার করত।
• সেই ছবি দিয়ে তৈরি করা হত ধনী, শিক্ষিত ও ভদ্র পাত্রের ভুয়ো প্রোফাইল।
• মহিলারা যেন সহজে বিশ্বাস করে, সেজন্য প্রতিটি প্রোফাইল নিখুঁতভাবে সাজানো হত।
• সামাজিক মাধ্যমেও ভুয়ো পরিচয় তৈরি করে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলত তারা।
• এসব প্রোফাইল থেকে বন্ধুত্ব, তারপর প্রেম এবং শেষে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিত।
• প্রতারকরা বলত, তারা বিদেশে কাজ করে বা বড় ব্যবসায় যুক্ত—যাতে বিশ্বাস বাড়ে।

হুগলি ছাড়িয়ে চক্রের নেটওয়ার্ক গোটা রাজ্যে ছড়ানো!

• পুলিশ জানিয়েছে, এই চক্র শুধুমাত্র হুগলিতে নয়, বর্ধমান, হাওড়া ও তারকেশ্বরেও সক্রিয় ছিল।
• দিল্লি পর্যন্ত তাদের সংযোগ ছড়িয়ে পড়েছিল বলে জানা গেছে।
• এই নেটওয়ার্কের মাধ্যমে অর্থ লেনদেনের জন্য পাঁচটি আলাদা ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করা হত।
• প্রতারিত মহিলাদের টাকা একাধিক অ্যাকাউন্টে ঘুরিয়ে লুকিয়ে রাখা হত।
• তদন্তে দেখা গেছে, এই চক্রের মোট উপার্জন ছিল প্রায় ৩ কোটি টাকা।
• প্রতারণার টাকা দিয়ে অভিযুক্তরা বিলাসবহুল জীবনযাপন করত এবং রিসর্টে লুকিয়ে থাকত।

সতর্কবার্তা দিল হুগলি গ্রামীণ পুলিশ!

• পুলিশ জানিয়েছে, বিবাহ সংক্রান্ত ওয়েবসাইট ব্যবহার করার সময় প্রত্যেককে সতর্ক থাকতে হবে।
• নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আসা প্রতিশ্রুতি বা অর্থের অনুরোধে অন্ধবিশ্বাস না করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
• ভিডিও কল বা সরাসরি দেখা না হলে কাউকে বিশ্বাস না করার পরামর্শ দিয়েছে পুলিশ।
• প্রোফাইল যাচাই করে, নথি ও তথ্য নিশ্চিত করে তারপর যোগাযোগ রাখতে বলা হয়েছে।
• পুলিশের বার্তা, “ভালোবাসা নয়, প্রথমে নিরাপত্তা”—এই হোক সাইবার যুগের মূলমন্ত্র।
• সাধারণ মানুষকে প্রতারণা থেকে রক্ষা করতে নিয়মিত সাইবার সচেতনতা কর্মসূচি চালাবে পুলিশ।

Editor’s Note

ভালোবাসার নামে আজকাল প্রতারণার জাল ছড়িয়ে পড়ছে অনলাইন দুনিয়ায়। সম্পর্কের আড়ালে চলছে অর্থ লুটের ব্যবসা! হুগলির এই ঘটনা যেন চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল কত সহজে বিশ্বাসের অপব্যবহার করা যায়। প্রশ্ন উঠছে—প্রেম, বিয়ে, বিশ্বাস—সবই কি এখন সোশ্যাল মিডিয়ার মিথ্যে মুখোশে ঢাকা? যেখানে এক ক্লিকেই গড়ে ওঠে সম্পর্ক, সেখানেই এক ক্লিকেই ভেঙে যায় মানুষের জীবন। পুলিশ এবার জাল ভেঙেছে ঠিকই, কিন্তু সমাজ কি জেগে উঠবে? না কি পরের ভুয়ো ‘অনুপম রায়’ আবার কারও নতুন জীবনের স্বপ্ন ভেঙে দেবে?