০৬ জানুয়ারি ২০২৫

BREAKING NEWS

Lorem Ipsum is a Dummy Text

নলেন গুড়ের মাহাত্ন্যঃ যার সুরভি ছাড়া বাংলার শীত অসম্পূর্ণ

বাঙালির শীতকালীন মিষ্টির উৎসবের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ এই গুড়। কিন্তু বর্তমানে এই গুড়ে মিশছে ভ্যাজাল। কি করে চেনা যাবে তাহলে আসল নলেন গুড়?

নলেন গুড় তৈরি হয় কীভাবে?

  • নলেন গুড় ছারা শীতকাল, বাঙালীর কাছে অনেকটা আলু ছারা বিরিয়ানীর মতন। শীতের প্রথম আমেজে গাছ থেকে গুড়ের রস সংগ্রহ করে বানানো এই গুড়ের স্বাদে যে মুগ্ধ হয়নি, সে বোধহয় শীতের প্রকৃত রসই আস্বাদন করেনি।
  • নলেন গুড় বানানোর জন্য প্রয়োজন খেজুর গাছের রস। কাকভোরে খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহ করার জন্য গাছের গায়ে বিশেষভাবে কাটার মাধ্যমে রস ঝরানো হয়।
  • এরপর সেই রসকে ধীরে ধীরে আগুনে জ্বাল দিয়ে ঘন করা হয়। ঘন হতে হতে রস যখন পুরু এবং সুগন্ধি হয়, তখন তৈরি হয় নলেন গুড়। এই গুড় তৈরি করার সময় কিন্তু কোনোরূপ আলাদা করে মিষ্টি যোগ করা হয় না খেজুরের রসের মিষ্টি থেকেই গুরের মিষ্টতা আসে।
  • এই পুরো প্রক্রিয়ায় কোনো রাসায়নিক উপাদান ব্যবহার করা হয় না, তাই নলেন গুড় সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক। রস যখন খুব গাড় হয়ে যায় তখন তাকে ছাঁচে ঢেলে বানানো হয় পাটালি। রস মোটামুটি যখন পাতলা থাকে তখন তা হয় ঝোলা গুড়। গুড়ের ঘবত্ব দেখে তবেই তাকে পাটালি বা ঝোলা গুড়ের জন্য ঠিক করা হয়।

কোথায় পাওয়া যায় নলেন গুড়?

  • নলেন গুড় বানানোর জন্য প্রয়োজন খেজুর গাছের রস। তাই যেখানে খেজুরের গাছের আধিক্য আছে সেখানেই রসের পসরা নিয়ে বসেন গুঁড় বিক্রেতারা।
  • বিশেষ করে নদিয়া, মুর্শিদাবাদ, বর্ধমান এবং বীরভূমের খেজুর গাছ পাওয়া যায় বেশী ফলে উত্তম মানের নলেন গুড় সংগ্রহ করা হয় সেইসব অংশ থেকেই।
  • এই এলাকাগুলোতে শীতকালে নলেন গুড় তৈরির ব্যস্ততা চূড়ান্ত পর্যায়ে থাকে। কলকাতা সহ পশ্চিমবঙ্গের শহরাঞ্চলেও এই গুড়ের বিশাল চাহিদা রয়েছে।
  • কলকাতায় কিছু বিখ্যাত মিষ্টির দোকান আছে যাদের তৈরী শীতকালে নলেন গুঁড়ের মিষ্টির জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। যেমন- বলরাম মল্লিকের জল ভরা নলেনগুড়ের সন্দেশ, নলেন গুঁড়ের রসগোল্লার জন্য কেসি দাস, গাঙ্গুরামের নলেন গুঁড়ের লাড্ডু বিশেষ জনপ্রিয়।
  • এই তথাকথিত মিষ্টি ছারাও আর একটি মিষ্টি আছে যা ছারা বাঙালীর শীতকাল অসম্পুর্ন তা হল জয়নগরের মোয়া। শীতকাল এলেই মোয়া নিয়ে রাস্তার পাশে পসরা বসে। এই মোয়া বাঙালীর মনে এক অন্য স্থানে আছে।

নলেন গুড়ের বিশেষত্ব

  • স্বাদ ও গন্ধ: নলেন গুড়ের মিষ্টি স্বাদ এবং অনন্য সুগন্ধই এর প্রধান আকর্ষণ।
  • প্রাকৃতিক: এটি সম্পূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে তৈরি হয়, কোনো প্রিজারভেটিভ ছাড়াই।
  • মিষ্টির জন্য আদর্শ: নলেন গুঁড় ছারা শীতকাল চিন্তা করা অসম্ভব। নলেন গুড় থেকে তৈরি পিঠে, পায়েস এবং সন্দেশ শীতের মরসুমে বাঙালির খাবার টেবিলে এক অন্য মাত্রা যোগ করে।

কেন ভালো মানের নলেন গুড় পাওয়া কঠিন?

  • শীতকাল এলে নলেন গুঁড়ের চাহিদা তুঙ্গে ওঠে। এইসময় অনেকেই বাজারে গুঁড়ের সরবরাহ ঠিক রাখতে অসাধু উপায় অবলম্বন করে।
  • নলেন গুঁড় তৈরির পক্রিয়া দীর্ঘ। গাছ থেকে রস নিয়ে তা জাল করে খেজুর গুঁড় বানাতে অনেক সময় লাগে। যার ফলে সরবরাহ ও উৎপাদনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে জল, রঙ ও মিষ্টি ব্যবহার করতে হয় প্রস্তুতকারকদের।
  • এছাড়াও ক্রমাগত খেজুর গাছের সংখ্যা হ্রাস গুঁড় তৈরিতে বাঁধার সৃষ্টি করছে।
  • পশ্চিমবঙ্গ সরকার অনেক আগেই ‘সুফল বাংলা’ উদ্যোগ নিয়েছেন যার লক্ষ্য সাধারণ মানুষের কাছে ন্যায্যমূল্যে তাজা এবং গুণমানসম্পন্ন কৃষিজ পণ্য সরবরাহ করা। গুঁড় এর মধ্যে অন্যতম কিন্তু বাস্তবে এই ব্যাবসায় আসছে মিডলম্যানরা।
  • মিষ্টি-কারবারিদের এখন সরাসরি গুড় চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ নেই বললেই চলে! কোলকাতার মানুষদের বা মিষ্টি ব্যাবসায়িদের এই মিডলম্যানদের থেকেই গুঁড় কিনতে হয় ও ট্যাক্স দিতে হয় ফলে তা নলেন গুঁড়ের সরবরাহে বাঁধা সৃষ্টি করছে

.

ব্রডকাস্ট চ্যানেল

ডেইলি ডিজিটাল নিউজ পেপার