জয়চণ্ডী পাহাড়ের কোলে স্কুল পড়ুয়াদের পরিবেশ সচেতনতা শিবির

শিবিরের উদ্দেশ্য ও অংশগ্রহণকারী

• বর্তমানে দূষণ নিয়ন্ত্রণ একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। আর এই কঠিন সমস্যার পেছনে অন্যতম দায়ী মানুষের পরিবেশের প্রতি উদাসীনতা। যথেষ্ট জ্ঞানের অভাব।
• আগামী প্রজন্মের কাছে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি করতেই রঘুনাথপুরের জয়চণ্ডী পাহাড়ে পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ স্কুল পড়ুয়াদের নিয়ে এই কর্মশালার আয়োজন করেন।
• এই কর্মসূচির মূল লক্ষ্য ছিল স্কুল জীবন থেকেই পড়ুয়াদের মধ্যে পরিবেশ সচেতনতা বৃদ্ধি করা। রঘুনাথপুরের নয়টি এবং পশ্চিম বর্ধমানের বরাকরের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের পড়ুয়া ও শিক্ষকরা এই দু'দিনের শিবিরে অংশগ্রহণ করেন।
• কর্মশালার প্রথম ধাপে জয়চণ্ডী পাহাড় সংলগ্ন এলাকায় থাকা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ চেনানো হয় পড়ুয়াদের।
• গাছগুলির বৈজ্ঞানিক নাম, তাদের উপকারিতা ও গুণাগুণ নিয়ে বিশদে আলোচনা করেন দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কর্মী ও আধিকারিকরা। পরে সেই তথ্যের উপর ভিত্তি করে একটি কুইজ প্রতিযোগিতাও অনুষ্ঠিত হয়।
• এছাড়াও, স্কুল পড়ুয়ারা তাদের তৈরি বিভিন্ন মডেল প্রদর্শন করে কর্মশালায় অংশ নেয়। বৃষ্টির জল সংরক্ষণ, জীব বৈচিত্র্য, থার্মোকল ও প্লাস্টিকের ব্যবহার কমিয়ে বাঁশ, বেত, তালপাতার মতো প্রাকৃতিক উপকরণের ব্যবহারে কীভাবে দূষণ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব, সেই বিষয়ে মডেল প্রদর্শিত হয়।
• এই মডেলগুলির ভিত্তি ছিল পরিবেশ দূষণ রোধে পড়ুয়াদের মৌলিক ভাবনা। প্রদর্শনীতে প্রথম নির্বাচিত হয় আদ্রার বিদ্যাসাগর বিদ্যাপীঠের পড়ুয়াদের তৈরি প্লাস্টিক দূষণ রোধে বিকল্প সামগ্রীর ব্যবহারের মডেলটি।

পর্ষদের মন্তব্য ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা

• দিনকে দিন বাড়ছে “দূষণ”। নদী, নালা থেকে পাহাড় পর্বত দূষণের কবলে এখন সমগ্র বিশ্ব চরাচর। তাই এই দূষণকে নিয়ন্ত্রণ করতেই আর পাঠ্য বই না, এবার ভরসা প্রকৃতির কোলে থেকেই পরিবেশকে রক্ষা করার পাঠ নেওয়া।
• তাই এই পরিবেশ সজাগতা অভিনব উদ্যোগ নিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।
• দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্র জানান, "পর্ষদের 'মিশন লাইফ' প্রকল্পের লক্ষ্যই হল পরিবেশ মনোযোগ বৃদ্ধি করা। পরিবেশের অবক্ষয় ঘটছে, ভূ-বৈচিত্র্যে আসা আঘাতগুলি প্রতিহত করতে কী করণীয়, তা শেখানোর চেষ্টা করা হল।"
• ভবিষ্যতে আরও এমন কর্মশালা করার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন তিনি। এবং পড়ুয়াদের থেকে যথেষ্ট ইতিবাচক সাড়াও মিলেছে।

সারা ভারত জুড়ে প্রকৃতির পাঠ

• ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে পরিবেশ সজাগতা ও সংরক্ষণ বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মশালা ও গবেষণা পরিচালিত হয়েছে। বাংলাই প্রথম নয়, উল্লেখযোগ্য ভাবে এই কর্মসূচিতে অনেক বেশী ইতিবাচক ফলও পাওয়া গেছে।
• কেরালা: সামুদ্রিক আবর্জনা ও মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ কর্মশালা- ২০২৩ সালের মে মাসে কেরালার তিরুবনন্তপুরমে সামুদ্রিক আবর্জনা ও মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ মূল্যায়ন এবং চরিত্রায়ণ বিষয়ে একটি আন্তর্জাতিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এই কর্মশালায় সামুদ্রিক পরিবেশে প্লাস্টিক দূষণের প্রভাব ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনা করা হয়।
• দিল্লি: শিশুদের পরিবেশগত উদ্বেগ প্রকাশের প্রধান প্ল্যাটফর্ম- সেসামি ওয়ার্কশপ ইন্ডিয়া দিল্লির শিশুদের স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে তাদের পরিবেশগত উদ্বেগ ভাগ করে নেওয়ার সুযোগ প্রদান করে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে শিশুদের কণ্ঠস্বর নীতিনির্ধারকদের কাছে পৌঁছানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়।
• হিমাচল প্রদেশ: অংশগ্রহণমূলক গবেষণা কর্মশালা- হিমাচল প্রদেশে স্থানীয় এনজিও JRCT-এর সঙ্গে অংশীদারিত্বে একটি অংশগ্রহণমূলক গবেষণা কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। এই কর্মশালায় শিক্ষার্থী ও কমিউনিটি কর্মীদের বর্জ্য ও পরিবেশগত সমস্যাগুলি সমাধানের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
• কর্ণাটক: জল ব্যবস্থাপনা ও টেকসই কৃষি কর্মশালা- ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্ট বেঙ্গালুরু (IIMB) কর্ণাটক রাজ্য সরকারের জন্য জল ব্যবস্থাপনা ও টেকসই কৃষি
বিষয়ে একটি কর্মশালা পরিচালনা করে। এই কর্মশালায় নোনাভিনাকেরে ট্যাঙ্কের ক্ষেত্রে অধ্যয়ন ব্যবহার করে স্টেকহোল্ডারদের ভূমিকা তুলে ধরা হয়।
• পুদুচেরি ও কুড্ডালোর: পরিবেশ শিক্ষা কার্যকারিতা গবেষণা- পুদুচেরি ও কুড্ডালোর অঞ্চলে উচ্চ বিদ্যালয়ের স্তরে সক্রিয় শিক্ষা ও শিক্ষণের ভিত্তিতে টেকসই উন্নয়নের জন্য পরিবেশ শিক্ষার কার্যকারিতা নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালিত হয়। এই গবেষণায় পরিবেশ শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা ও অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাওয়ার বিষয়টি বিশ্লেষণ করা হয়।