০৬ জানুয়ারি ২০২৫

ট্যাংরার বাড়ি হেলে পড়েছে, আর নির্মাতা এখন শ্রীঘরে!

টিল্টেড ট্যাংরা বাড়ি ডেভেলপার গ্রেফতার, কলকাতা মিউনিসিপাল কর্পোরেশন অ্যাক্টে মামলা দায়ের। রাজত লি, ৬৮, ক্রিস্টোফার রোডের বাসিন্দা ছিলেন।

ট্যাংরায় হেলে নির্মীয়মাণ বহুতল, আতঙ্কে বাসিন্দারা

  • কিছুদিন আগেই চোখের সামনে ধসে পরেছে বিজয়গরের একটি আবাসন। তার পর পরেই বাঘাযতীনের ঘটনার পর এবার ট্যাংরায় হেলে পড়ল একটি নির্মীয়মাণ বহুতল।
  • ক্রিস্টোফার রোডে নির্মাণাধীন পাঁচতলা একটি ভবন পাশের বাড়ির উপর হেলে পড়ে। এর ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
  • স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছর একটি প্রোমোটিং সংস্থা ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু করেছিল। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই ভবনটি প্রায় সম্পূর্ণ হয়ে যায়। তবে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই, অপ্রত্যাশিতভাবে এটি হেলে পড়ে।
  • এর থেকেই বোঝা যায় কতটা নড়বড়ে ভাবে নির্মাণ হচ্ছিল বাড়িটি। সৌভাগ্যবশত, ভবনটিতে কেউ বসবাস করছিল না। তবে সেখানে কর্মরত রাজমিস্ত্রিরা উপস্থিত ছিলেন, যদিও তারা অক্ষত রয়েছেন, ফলে কোন হতাহতের খবর নেই।
  • বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে কলকাতা পুরসভার নির্ধারিত নিয়ম মানা হয়নি। পাশের ভবনগুলোর সঙ্গে ন্যূনতম দূরত্ব না রেখেই নির্মাণকাজ চালানো হয়েছিল।
  • তাছাড়া, নির্মাণের আগে মাটির পরীক্ষাও সঠিকভাবে করা হয়নি বলে দাবি করেছেন স্থানীয়রা। একজন বাসিন্দার প্রশ্ন করেন "যে কোনও বহুতল নির্মাণের আগে মাটি পরীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এই ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে কি সেই নিয়ম মানা হয়েছিল?"
  • এই ঘটনার ফলে কলকাতা পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কীভাবে এই দুর্বল জমির উপর বহুতল নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হল, তা নিয়েও স্থানীয়দের মধ্যে অসন্তোষ রয়েছে।
  • ট্যাংরার ক্রিস্টোফার রোডে একটি হেলে পড়া বহুতল ভাঙতে নোটিশ জারি করেছে কলকাতা পুরসভা। বাসিন্দাদের তিন দিনের মধ্যে ভবনটি খালি করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বাড়ির প্রমটার কে ইতিমধ্যেই জেলেও পাঠানো হয়েছে।

কি বলছে পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম?

  • কলকাতায় হেলে পড়া ভবনের সংখ্যা নিয়ে মেয়র ফিরহাদ হাকিমের সাম্প্রতিক মন্তব্য বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
  • তিনি জানিয়েছেন, শহরে প্রায় ৩০টি ভবন হেলে রয়েছে, যার মধ্যে ৬৫ শতাংশই বেআইনি নির্মাণ। এই ভবনগুলিতে মানুষ বসবাস করছেন, যা উদ্বেগের বিষয়।
  • তাহলে এখানে প্রশ্ন উঠছে, ফিরহাদ হাকিমের এই কথার মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে যে পুরোসভাও যানে যে বেশীরভাগ নির্মান বেআইনি তাহলে কোলকাতার বুকে কিভাবে তৈরি হচ্ছে এতো বেআইনি নির্মানI
  • মেয়র জানান, ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে আলোচনা করে এই ভবনগুলির বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করা হবে। তার কাজও ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গেছে।
  • মেয়র হাকিমের মতে, সব হেলে পড়া ভবন বিপজ্জনক নয়। যদি স্ট্রাকচারাল অ্যাবিলিটি টেস্টে ভবনটি নিরাপদ প্রমাণিত হয়, তবে তা বিপজ্জনক নয় বলে বিবেচিত হবে।

হেলে পরা বাড়ি নিয়ে বিরোধীদের সোজাসাপটা খোঁটা

  • হেলে পরা বাড়ি নিয়ে মোটেও চুপ বসে নেই বিরোধীপক্ষরা। বিরোধীদের দাবি, হেলে পড়া ভবনের সংখ্যা মেয়রের উল্লেখিত সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি। আসল সংখ্যা লোকাচ্ছে সরকার।
  • তাদের মতে, পুরসভা শুধুমাত্র প্রধান সড়কের পাশে থাকা ভবনগুলির তথ্য দিয়েছে, কিন্তু শহরের অলিগলিতে আরও অনেক হেলে পড়া ভবন রয়েছে, যেখানে পুরসভার নজর পড়েনি। তাহলে সেখানে কোন বিপদ ঘটলে কে দায় নেবে?
  • তারা আরও অভিযোগ করেন, বেআইনি নির্মাণ ভাঙার ক্ষেত্রে পুরসভার দাবি বাস্তবের সঙ্গে মিলছে না। অনেক ক্ষেত্রে শুধুমাত্র আংশিক ভাঙা হয়েছে, যা পরিপূর্ণ সমাধান নয়।
  • বিরোধীপক্ষরা বলেন এইসব লোক দেখান আসলে কোন ব্যবস্থাই প্রশাসন নিচ্ছে না। মানুষ জীবন হাতে নিয়ে এইসব বিপজ্জনক বাড়িতে বসবাস করছে।
  • গণ্ডগোল রয়েছে গোঁড়াতেই, পুরসভার নজরদারির অভাব এবং নির্মাণের সময় নিয়ম না মানা। তাদের মতে, শুধুমাত্র ভবন হেলে পড়ার পর পদক্ষেপ নেওয়া যথেষ্ট নয়; নির্মাণের সময় থেকেই কঠোর নিয়মাবলী পালন নিশ্চিত করতে হবে। এবং নিয়মাবলী যাতে মানা হয় টার দিকেও দিকপাত করতে হবে।

কলকাতা পৌরসভার বাইরে অবৈধ নির্মাণ রুখতে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কমিটি গঠন করল

  • শহর উন্নয়ন নিয়ন্ত্রণ ও অবৈধ নির্মাণ রোধে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার একটি আট সদস্যের রাজ্যস্তরীয় কমিটি গঠন করেছে, যা কলকাতা পৌর সংস্থার (KMC) বাইরের পৌর এলাকাগুলিতে অবৈধ নির্মাণ সংক্রান্ত অভিযোগগুলি তদন্ত করবে। নবগঠিত এই কমিটি বিধাননগর, নিউ টাউন এবং রাজ্যের অন্যান্য পৌর অঞ্চলে নির্মাণ সংক্রান্ত বিধি লঙ্ঘনের উপর নজরদারি করবে।
  • শহর উন্নয়ন দফতরের কর্মকর্তাদের এবং স্থপতিদের সমন্বয়ে গঠিত এই কমিটি অনুমোদিত ভবন পরিকল্পনা থেকে ছোটখাটো বিচ্যুতি এবং অবৈধ নির্মাণের ঘটনাগুলি খতিয়ে দেখবে। এছাড়া, স্থানীয় পৌর সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে প্রেরিত সংশ্লিষ্ট বিষয়ে প্রযুক্তিগত পরামর্শও প্রদান করবে।
  • এই উদ্যোগটি পশ্চিমবঙ্গ পৌর (ভবন) বিধি, ২০০৭-এর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যা নির্মাণ কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং অনুমোদিত ভবন পরিকল্পনার সঠিকতা নিশ্চিত করে। কমিটির ভূমিকা শুধুমাত্র তদন্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এটি খতিয়ে দেখবে যে কোনও নির্মাণ প্রকল্প বিধি মেনে চলছে কিনা এবং কোনও ছোটখাটো পরিবর্তন বা অবৈধ সংশোধন অনুমোদন ছাড়া করা হয়েছে কিনা।
  • শহর উন্নয়ন দফতর পৌর এলাকায় হেলে পড়া বা কাঠামোগতভাবে দুর্বল ভবন সম্পর্কিত সমস্যাগুলি মোকাবিলায় নির্মাতাদের জন্য বিস্তারিত নির্দেশিকা জারি করেছে। এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য হলো নিম্নমানের নির্মাণপ্রক্রিয়া থেকে উদ্ভূত নিরাপত্তা ঝুঁকি প্রতিরোধ করা এবং সংশোধনের জন্য একটি কাঠামোগত দিকনির্দেশনা প্রদান করা।
  • স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা আরও বাড়ানোর জন্য, রাজ্য সরকার সম্প্রতি নির্বাচিত পৌর কাউন্সিলরদের থেকে ভবন পরিকল্পনা অনুমোদনের ক্ষমতা পৌর আধিকারিকদের হাতে স্থানান্তর করেছে। এই পরিবর্তনের ফলে অনুমোদন প্রক্রিয়ার বিলম্ব কমবে, দুর্নীতি প্রতিরোধ হবে এবং শহর ও শহরতলির অঞ্চলে অবৈধ নির্মাণ কার্যক্রম রোধ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
  • ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারি জমিতে নির্মাতাদের অবৈধ দখলদারি বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, জমি ও নির্মাণ সংক্রান্ত আইন লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে, যার মধ্যে গ্রেপ্তার ও সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার মতো ব্যবস্থাও অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

.

ব্রডকাস্ট চ্যানেল

ডেইলি ডিজিটাল নিউজ পেপার