Happening Now
Japan Trends: Lazy Millionaire Just by Conceiving a Unique Idea
কিছু না করাটাও কাজ! জাপানে একাকিত্ব দূর করে লক্ষ টাকা আয় মরিমোটোর
শোজো মোরিমোতো, জাপানের 'কিছু না করা' উদ্যোক্তার, বছরে আয় ৬৯ লাখ। মোরিমোতোর প্রকল্প ‘রেন্টাল ডু-নথিং’ সেই সব জাপানিদের, কফি থেকে কনসার্ট, সঙ্গ দেয় যারা প্রেমবিহীন সঙ্গী খুঁজছেন।


শুধু বাড়ি-গাড়ি নয়, জাপানে বন্ধু ভাড়ায় পাওয়া যায়
- জাপান ক্রমবর্ধমান একাকীত্ব ও বিচ্ছিন্নতার সংকটে ভুগছে, বিশেষ করে বয়স্ক ও তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে। সরকার এই সমস্যাকে স্বীকৃতি দিয়ে তা সমাধানের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে একটি জাতীয় সমীক্ষা এবং "একাকীত্ব বিষয়ক মন্ত্রী" নিয়োগ।
- এবং লক্ষ লক্ষ জাপানি তরুণদের মধ্যে, এক উদ্যমী ব্যক্তি এই মূল সমস্যাটিকে উপলব্ধি করে এর সঙ্গে গভীরভাবে সংযোগ স্থাপন করেন। আর জানেন তিনি কী করলেন? তিনি এক অভিনব ব্যবসায়িক ধারণা তৈরি করলেন—একা মানুষদের সঙ্গ দেওয়া ভাড়ায়!
- জাপানের ৩০-এর কোঠায় থাকা শোজি মরিমোটো ২০১৮ সাল থেকে নিজেকে "ভাড়ায় পাওয়া যায়" এমন একজন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত করেছেন।
- তবে তাঁর কাজ খুব সাধারণ—ক্লায়েন্টদের পাশে থাকা, তাঁদের কথা শোনা, খাবার খাওয়া, মাঝে মাঝে শুধু উপস্থিত থাকা। কেউ যদি বলেন, "আমাকে দুপুর ১২টায় নখ কাটার কথা মনে করিয়ে দিও, শোজি সেই কাজই করেন। সেই কাজের মাথা মুণ্ডু থাকুক না থাকুক। আর এখানেই শোজির কাজের বিশেষত্ব।
- শোজির কাজ খুবই অদ্ভুত এবং নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলে। তাঁর পরিষেবার মধ্যে থাকতে পারে, ম্যারাথনের ফিনিশিং লাইনে দাঁড়িয়ে কাউকে স্বাগত জানানো, ক্লায়েন্ট ব্যস্ত থাকলে ভিডিও কলে মিটিং করা, ক্লায়েন্টের হয়ে কনসার্টে গিয়ে তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো , পোষ্যের ছবি পাঠিয়ে তার প্রশংসা করা, কারও চাকরি চলে গেলে তাঁর সঙ্গে বার্গার খাওয়া ইত্যাদি এরম নানা অদ্ভুত শোজি করে থাকেন।
- তবে কিছু কঠোর নিয়ম তিনি মেনে চলেন, যেমন- কোনও পরামর্শ দেন না, একই ক্লায়েন্টের সঙ্গে বারবার দেখা করেন না, যৌন সম্পর্কের প্রস্তাব গ্রহণ করেন না। শোজির কাজ মূলত মানুষের একাকিত্ব দূর করা, কিন্তু একেবারেই নৈর্ব্যক্তিকভাবে।
- তাঁর এই অদ্ভুত পেশা জাপানসহ সারা বিশ্বের সংবাদমাধ্যমে আলোড়ন তুলেছে। তাঁর জীবন নিয়ে মাঙ্গা, টিভি সিরিজ এবং এখন একটি স্মৃতিকথা লেখা হয়েছে।
এই কাজে কীভাবে এলেন শোজি?
- বিশ্বখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ ডেভিড গ্রেবার একবার বলেছিলেন, "বেশিরভাগ চাকরিই অর্থহীন।" শোজি মনে করেন, সমাজের অপ্রয়োজনীয় নিয়ম, আত্ম-অবমূল্যায়ন, কৃত্রিম টিমওয়ার্ক—সবকিছুই অর্থহীন।
- অন্য সবার মতনই শোজির জীবনও ছিল কণ্টকসম। বড়ভাইয়ের অবসাদ, বড় বোনের স্বপ্নের চাকরি না পেয়ে আত্মহত্যা করা শোজিকে ব্যাপকভাবে নাড়া দেয়।
- জীবনের প্রথমে শোজি ভূমিকম্প নিয়ে গবেষণা করলেও শেষমেশ ফ্রিল্যান্স লেখক হিসেবে কাজ শুরু করেন। অফিসের বস তাঁকে বলেছিলেন, "তোমার ব্যক্তিত্ব নেই, তুমি সৃজনশীল নও।"
- সেখান থেকেই নতুন কিছু করার জেদ চাপে শোজির। আর এরপরেই নতুনভাবে নতুন কাজ করার উদ্যম পান তিনি।
- আর শুরু করেন লোকের অনুরোধ রেখে উপার্জন। তিনি বলেন, "আমি অনেক কিছু শিখেছি। অনেক সময় অদ্ভুত অনুরোধও পাই, যেমন—কড়া রোদে দাঁড়িয়ে থাকা, হাড় কাঁপানো ঠান্ডায় এক ঘণ্টা অপেক্ষা করা, অচেনা কারও সঙ্গে কনসার্টে যাওয়া। তবে কিছু ভালো কাজও করতে হয়, যেমন—কাউকে দেওয়া, কারও দুঃখের কথা শোনা। তবে কোনও পরামর্শ বা উপদেশ দেওয়া আমার কাজ নয়।"
- প্রথমদিকে, শোজি দুই থেকে তিন ঘণ্টার জন্য ১০ হাজার থেকে ৩০ হাজার ইয়েন (৬৫ থেকে ১৯৫ ডলার) চার্জ করতেন।
- কিন্তু পরে তিনি সিদ্ধান্ত নেন, ক্লায়েন্ট যা খুশি দিতে চান, সেটাই হবে তাঁর পারিশ্রমিক। এইভাবেই তিনি গত বছরে ৮০ হাজার ডলার (প্রায় ৬৯ লক্ষ টাকা) আয় করেছেন।
- শোজি জানান, প্রতিদিন এক হাজারের বেশি অনুরোধ পান তিনি!
- শোজির মতে, "কেউ যদি সমাজে তেমন অবদান রাখতে না-ও পারে, তবুও তাঁদের বেঁচে থাকার অধিকার থাকা উচিত।"
- শোজি নিজেকে "কিছু না করা লোক" বললেও, তিনি সমাজের এক নিরব চিত্রকর হয়ে উঠেছেন।
- তিনি প্রমাণ করেছেন যে—সমাজে সব সময় সক্রিয় কিছু করতেই হবে, এই ধারণাটা আসলে আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়।
- আজকের জাপানে, যেখানে মানুষের নিঃসঙ্গতা বাড়ছে, সেখানে শোজির মতো কেউ শুধু পাশে থেকে, কিছু না করেও, অনেক কিছু করতে পারেন!
জাপানের একাকী মৃত্যুর মহামারীর কেন্দ্রবিন্দুতে জীবন
- জাপান পুলিশ-এর প্রতিবেদনের মতে, এই বছরে প্রায় ৬৮,০০০ মানুষ একা এবং অজানায় মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
- জাপানের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে, আরও বেশি মানুষ তাদের জীবনের শেষ বছরগুলো একাকীত্বে কাটাচ্ছেন। জনসংখ্যা ও সামাজিক নিরাপত্তা গবেষণা সংস্থার মতে, ২০২০ সালে ৬৫ বছরের ঊর্ধ্বে একা বসবাসকারী মানুষের সংখ্যা ছিল ৭.৩৮ মিলিয়ন, যা ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ১১ মিলিয়নে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ২০২০ সালের জনগণনার তথ্য অনুযায়ী, একক ব্যক্তির পরিবার মোট পরিবারের প্রায় ৩৮% করছে, যা আগের পাঁচ বছর আগে পরিচালিত সমীক্ষার তুলনায় ১৩.৩% বৃদ্ধি পেয়েছে।
- টোকিওয়াদাইরা মতো বিভিন্ন শহরে ৫০% এর বেশি জনসংখ্যা একা বসবাস করে, যার ফলে তারা হতাশায় ভুগছে। এই সমস্যা মোকাবিলায় নানা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। বাসিন্দাদের সংগঠন একটি হটলাইন চালু করেছে, যেখানে উদ্বিগ্ন প্রতিবেশীরা কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করতে পারেন।
- ২০০৪ সালে তারা "শূন্য একাকী মৃত্যু" অভিযান শুরু করে, যা এখন অন্যান্য বয়স্কদের আবাসন প্রকল্পের জন্য একটি মডেল হয়ে উঠেছে।
- এই আবাসন কমপ্লেক্সে কিজুনা বা "সামাজিক বন্ধন" কল চালু করা হয়েছে, যা সেন্সরযুক্ত একটি পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা, যা নিশ্চিত করে যে অ্যাপার্টমেন্টের বাসিন্দা চলাফেরা করছেন কিনা।
- এছাড়া, স্বেচ্ছাসেবী টহলদাররা কিছু লক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে যা ইঙ্গিত দেয় যে পরিস্থিতি ভালো নয়—যেমন শুকিয়ে যাওয়া কাপড় দীর্ঘ সময় বারান্দায় পড়ে থাকা, দিনের বেলায় পর্দা টানা থাকা, ডাক বা সংবাদপত্র জমে থাকা, এবং রাতভর আলো জ্বলে থাকা।
- জাপান সরকার এই সমস্যাটিকে স্বীকৃতি দিয়েছে এবং এটি সমাধানের জন্য বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এই উদ্যোগগুলির মধ্যে রয়েছে কাউন্সেলিং পরিষেবা, সহায়তা গোষ্ঠী এবং ব্যক্তি ও পরিবারের জন্য আর্থিক সহায়তা।




ব্রডকাস্ট চ্যানেল







ডেইলি ডিজিটাল নিউজ পেপার











Copyright © All Rights Reserved by Truee News Bangla is a copyright property of Independent Media Corp