০৬ জানুয়ারি ২০২৫

আইআইটি থেকে সন্ন্যাসী? ভগবানের জন্য টাকাকে দূরে ঠেলেছেন এই আইআইটি বাবারা

আইআইটি থেকে পাশ করে ঠুকরিয়েছেন কয়েক লাখ টাকার চাকরি। ভগবানের পায়ে সমর্পন করে সাধারণ জীবন থেকে ছুটি নিয়েছেন এই কয়েকজন সাধু। দেখে নিন করেছেন এরম অসাধ্য সাধন?

আইআইটি বাবা ওরফে অভয় সিং

  • খবর থেকে সোশ্যাল মিডিয়া জুরে এখন শুধুই আইআইটি বাবা। সাধারণত আইআইটি থেকে পাশ করে ভালো চাকরি করবে এটাই আশা থাকে সবার।
  • আইআইটি থেকে পাশ করা মানে লাইফসেট এটাই ধারনা আমাদের, আর কিছু হোক না হোক কখনও রুটি রুজি নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতে হবে না। কিন্তু আমাদের সেই ভাবনাকেই বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ভগবানের চরণে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন এই বাবা।
  • আইআইটি বাবা ওরফে অভয় সিং এর বাড়ি হারিয়ানা। ছোট থেকে পড়াশোনায় মেধাবী এই ছেলে যোগ দেয় আইআইটি বোম্বেতে। এরোস্পেস নিয়ে পড়াশোনা করেছেন অভয়।
  • অভয় আইআইটিতে একটি প্লেসমেন্ট পজিশন পান। তিনি একজন কর্পোরেট কর্মচারী হিসেবেও কাজ করতেন। তবে জীবনে অস্বস্তি বোধ করায় তিনি তাঁর প্রিয় ফটোগ্রাফির দিকে মন দেন। কিন্তু ফটোগ্রাফি তাঁকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। এই হতাশাই তাঁকে আধ্যাত্মিকতার পথে নিয়ে যায়।
  • পড়াশোনায় মেধাবী হলেও অভয়ের আগাগোড়া দার্শনিকতায় মনোযোগ ছিল। নিয়মিত ধ্যান করতেন অভয় যার জন্য তাকে গ্রামছারা পর্জন্ত করা হয়। কিন্তু এসব কিছুই বেঁধে রাখতে পারেনি কুম্ভের এই আইআইটি বাবাকে। অভয় সিং তাঁর চাকরি ও পরিবার ছেড়ে সন্ন্যাসী হয়ে যান।

রসনাথ দাস

  • দেশের সেরা আইআইটি থেকে পাস করার পর ওয়াল স্ট্রিটে কাজ করেছিলেন। স্টক মার্কেটের মাধ্যমে প্রচুর টাকা রোজগারও করেন তিনি। কিন্তু তার শিক্ষা বা তার কাজ কোনো কিছুই তাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। তাই আধ্যাত্মিকতাকেই বেছে নেন আর এক আইআইটি বাবা।
  • রাসনাথ দাস আইআইটি এবং কর্নেল ইউনিভার্সিটি থেকে এমবিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে এবং বিদেশে উচ্চ বেতনের চাকরি পাওয়ার পরও, ভগবানের পায়ে সব মোহ অর্পন করেন তিনি এবং গেরুয়া বসন ধারণ করেন।
  • রাসনাথ দাস একজন আধ্যাত্মিক শিক্ষক এবং বক্তা হিসেবে পরিচিত। তিনি "ভক্তি সেন্টার" নামে একটি আধ্যাত্মিক সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেখানে মানুষ জীবনের প্রকৃত উদ্দেশ্য এবং মানসিক শান্তি সম্পর্কে শিখতে আসে।

স্বামী মুকুদানন্দ

  • আইআইটি দিল্লি এবং আইআইএম কলকাতা থেকে বি টেক ও স্নাতকোত্তরে ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। উচ্চ শিক্ষার মাধ্যমে স্বামী মুকুন্দানন্দ কর্পোরেট জগতে অনেক কর্মসংস্থানের সুযোগ পেলেও, ভগবানের প্রতি আকর্শন তিনি ফেরাতে পারেননি। তিনি আধ্যাত্মিকতাকে বেছে নেন।
  • তিনি ভক্তি যোগ, শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা এবং উপনিষদের গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। তার বক্তৃতা এবং শিক্ষা মানুষের জীবনের গভীর সমস্যাগুলি সমাধানে সহায়তা করে চলেছে।
  • স্বামী মুকুন্দানন্দ "জগদগুরু কৃষ্ণ ফাউন্ডেশন" প্রতিষ্ঠা করেন, যা ভক্তি যোগ এবং আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমে মানসিক শান্তি এবং সুখ অর্জনের জন্য কাজ করে। তিনি বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেন এবং সারা বিশ্বে ভক্তি যোগ ও আধ্যাত্মিকতার প্রচার করেন। তার বক্তৃতা, সেমিনার এবং ওয়ার্কশপ হাজার হাজার মানুষকে জীবনের গভীর অর্থ খুঁজে পেতে সহায়তা

অবিরল জৈন

  • অবিরল জৈন আইআইটি (বিএইচইউ) বারাণসী থেকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং পড়েছিলেন। এখানেই পড়াশোনা করার সময় তিনি একটি বড় কর্পোরেট সংস্থায় ৪০ লক্ষ টাকার চাকরি পান। তবে এই কর্মজীবন এত টাকাকে হেলায় সরিয়েছিলেন তিনি, চাকরি তাকে দিতে পারেনি মানসিক শান্তি।
  • ২০১৯ সালে, জীবনের প্রকৃত অর্থ খুঁজে পাওয়ার উদ্দেশ্যে তিনি এই উচ্চ বেতনের চাকরি ছেড়ে দেন। তারপর থেকে তিনি আধ্যাত্মিকতার পথে চলার সিদ্ধান্ত নেন এবং ভক্তির এই পথে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন।

সঙ্কেত ফারেখ

  • সঙ্কেত ফারেখ আইআইটি বোম্বে থেকে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তার পড়াশোনার পর, তিনি একটি উচ্চ বেতনের চাকরি পেয়েছিলেন এবং কর্পোরেট জীবনে প্রবেশ করেন। তবে এই জীবনধারা তার মনের শান্তি এবং অন্তর্নিহিত তৃপ্তি এনে দিতে ব্যর্থ হয়।
  • জীবনের প্রকৃত অর্থ খুঁজে পাওয়ার জন্য তিনি চাকরি এবং বিলাসিতার জীবন ত্যাগ করেন। এরপর তিনি আধ্যাত্মিকতার পথে নিজেকে নিবেদিত করেন এবং সন্ন্যাস গ্রহণ করেন। বর্তমানে সঙ্কেত ফারেখ আধ্যাত্মিকতা এবং সমাজসেবায় নিজেকে নিয়োগ করেছেন।

মোহন মহারাজ

  • মোহান(spelling) মহারাজ (যিনি শ্রীমৎ স্বামী বিদ্যাত্মানন্দ পুরী নামেও পরিচিত) আইআইটি কানপুর থেকে গ্র্যাজুয়েশন এবং পোস্ট-গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া (UC) থেকে পিএইচডি অর্জন করেন। তার বিষয় ছিল গাণিতিক গবেষণা।
  • পিএইচডি শেষ করার পর, তিনি মুম্বাইয়ের টাটা ইনস্টিটিউট অব ফান্ডামেন্টাল রিসার্চে (TIFR) গণিতের শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। তার শিক্ষাদানের দক্ষতা ও গভীর জ্ঞান অত্যন্ত প্রশংসিত হলেও, কর্পোরেট এবং একাডেমিক জীবনের প্রতি তার আকর্ষণ ক্রমশ কমতে থাকে।
  • তিনি দেখিয়েছেন যে জীবনের প্রকৃত সুখ শুধুমাত্র পেশাগত সাফল্যে নয়, বরং অন্তরের শান্তি এবং জীবনের গভীর অর্থ খুঁজে পাওয়ার মধ্যে রয়েছে। ফলে ইনিও নাম লেখান আইআইটি বাবার পথেই।

আচার্য প্রশান্ত

  • আইআইটি দিল্লি থেকে স্নাতক হওয়া আচার্য প্রশান্তের ওরফে প্রশান্ত ত্রিপাঠি, জীবনের গভীর উপলব্ধির মাধ্যমে তিনি "আচার্য প্রশান্ত" নামে পরিচিত হন। তার ধর্মীয় এবং অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য "ধর্ম টকস" (Dharma Talks) বিশ্বজুড়ে শ্রোতাদের আকৃষ্ট করেছে। তার বক্তৃতায় ভগবদ গীতা, উপনিষদ, বৌদ্ধ দর্শন এবং অন্যান্য আধ্যাত্মিক গ্রন্থের জ্ঞানের গভীরতা তুলে ধরা হয়। এগুলি শুধু ধর্মীয় নয়, বরং জীবনের নানা সমস্যার সমাধান এবং মানসিক শান্তি লাভের পথ দেখায়।
  • আচার্য প্রশান্ত নিজের প্রতিষ্ঠান "PrashantAdvait Foundation" প্রতিষ্ঠা করেছেন, যেখানে তিনি আধ্যাত্মিক জ্ঞান এবং মানবিক মূল্যবোধ প্রচার করেন। তার লক্ষ্য হলো আধুনিক জীবনযাপনের চাপে থাকা মানুষের কাছে প্রাচীন আধ্যাত্মিক জ্ঞানকে সহজ এবং গ্রহণযোগ্য করে তোলা।

রাধেশ দাস

  • রাধেশ দাস (রাধেশ্যাম দাস) ১৯৯৩ সালে আইআইটি বোম্বে থেকে এমটেক ডিগ্রি অর্জন করেন। একজন মেধাবী শিক্ষার্থী হিসেবে তার সামনে উজ্জ্বল পেশাগত সুযোগ ছিল। কিন্তু তিনি নিজের জীবনের সফলতা অর্জনের চেয়েও সমাজের সেবা এবং আধ্যাত্মিক পথে হাঁটতে সমগ্র মোহ মায়া ত্যাগ করেন।
  • ১৯৯৭ সালে তিনি ইসকনে (ISKCON) যোগ দেন এবং আধ্যাত্মিকতা ও সেবার কাজে নিজেকে নিবেদিত করেন। বর্তমানে তিনি ইসকন পুনেতে থেকে মানুষের সেবা কর চলেছেন। সেখানে তিনি ভক্তি-যোগ, ভগবত গীতার জ্ঞান প্রচার এবং মানুষের জীবনে আধ্যাত্মিকতার গুরুত্ব তুলে ধরছেন।

স্বামী সার্বভৌমানন্দ (V. R. Parameswaran)

  • স্বামী সার্বভৌমানন্দ, যার আসল নাম ভি. আর. পরমেশ্বরন, ছিলেন একজন মেধাবী ইঞ্জিনিয়ার এবং গবেষক। তিনি আইআইটি কানপুর থেকে ইঞ্জিনিয়ারিং সম্পন্ন করেছিলেন। পড়াশোনা এবং কর্মজীবনে অসামান্য সফলতা থাকা সত্ত্বেও, তিনি জীবনের গভীরতর অর্থ এবং আধ্যাত্মিক শান্তির সন্ধান করে গেছেন ক্রমাগত।
  • স্বামী সার্বভৌমানন্দ সবসময় বিজ্ঞান এবং আধ্যাত্মিকতার মধ্যে যোগসূত্র খুঁজে বের করার চেষ্টা করতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, বিজ্ঞানের মাধ্যমে আমরা বাইরের জগৎ বুঝি, আর আধ্যাত্মিকতার মাধ্যমে নিজের অন্তর্গত জগৎকে।

.

ব্রডকাস্ট চ্যানেল

ডেইলি ডিজিটাল নিউজ পেপার