০৬ জানুয়ারি ২০২৫

মুঘল উত্তরাধিকারী এখন মাত্র ৬০০০ টাকা পেনশনে জীবনযাপন করছেন!

আকবরের সাম্রাজ্যের আনুমানিক মূল্য আজকের হিসাবে প্রায় ২১ ট্রিলিয়ন ডলার, যা পরবর্তী শাসকদের যুদ্ধ এবং ভোগ-বিলাসিতায় লিপ্ত থাকায় হ্রাস পায়ে। ফলাফল? শেষ মুঘল সম্রাটের বংশধর আজ বস্তিতে থাকেI

শেষ মুঘল সম্রাট: এক ঝলক ফিরে দেখা

  • বাহাদুর শাহ জাফর, সুলতানার স্বামীর প্রপিতামহ, ১৮৩৭ সালে মুঘল সম্রাট হন। তবে তখন পর্যন্ত একসময়ের মহাশক্তিশালী মুঘল সাম্রাজ্য তার পূর্বের গৌরব হারিয়ে ফেলেছিল, এবং প্রকৃত ক্ষমতা ছিল ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাতে।
  • ১৮৫৭ সালের ভারতীয় বিদ্রোহ শুরু হলে, জাফর সেই বিদ্রোহের প্রতীকী নেতা হন। দুর্ভাগ্যবশত, বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়, এবং জাফরকে নির্বাসিত করা হয় রেঙ্গুন (বর্তমান ইয়াঙ্গুন, মিয়ানমার), যেখানে ১৮৬২ সালে তিনি বন্দিদশায় মৃত্যুবরণ করেন।

সাম্রাজ্যের করুণ পতন

  • ৬০ বছর বয়সী সুলতানা বেগম শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের প্রপৌত্রী। সুলতানার স্বামীর প্রপিতামহ ছিলেন শেষ মুঘল সম্রাট, যিনি ১৮৩৭ সালে সিংহাসনে আরোহণ করেন। একসময় বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী ও ধনী রাজবংশের অংশ হওয়া সত্ত্বেও, আজ তাঁর এই বংশধর এক নির্মম বাস্তবতার মুখোমুখি জীবনযাপন করছেন।
  • সুলতানা বেগম তাঁর পরিবারসহ হাওড়ার এক ছোট্ট দুই-কক্ষের ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করেন, যা কলকাতার অন্যতম দারিদ্র্যপীড়িত এলাকা। দৈনন্দিন কাজের জন্য তিনি রাস্তার পাবলিক কলের পানি ব্যবহার করেন এবং রান্নার জন্য প্রতিবেশীদের সঙ্গে একটি যৌথ রান্নাঘর ভাগ করে নেন। একসময়ের রাজকীয় প্রাসাদের বিলাসবহুল জীবন থেকে এটি এক বিপরীত বাস্তবতা।
  • ১৯৮০-এর দশকে সুলতানা বেগমের জীবনভাবে বদলে যায়, যখন তাঁর স্বামী, রাজকুমার মির্জা বেদার বখত, মৃত্যুবরণ করেন। সেই সময় থেকে তিনি মাত্র ৬,০০০ টাকা মাসিক পেনশনের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকার লড়াই করে যাচ্ছেন। ছয় সন্তানকে সামলাতে গিয়ে পরিবারটি চরম আর্থিক সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। তাঁর কন্যারাও অর্থনৈতিক সমস্যার মুখোমুখি, ফলে তেমন সহায়তা করতে পারছেন না।
  • সুলতানা তাঁর অবিবাহিত কন্যা মধু বেগমের সঙ্গে বসবাস করেন। সরকার থেকে সহায়তার জন্য তিনি অসংখ্যবার আবেদন করলেও তাঁর দুর্দশা কাটেনি। তাঁর রাজকীয় বংশপরিচয় যথেষ্ট নথিভুক্ত হলেও, স্বীকৃতি বা সাহায্য খুব সামান্যই পেয়েছেন।
  • পরিবারের কিছু সদস্য, যেমন তাঁর নাতনি রোশন আরা, সরকারি চাকরি পেতে সক্ষম হয়েছেন। তবে বেশিরভাগই, বিশেষ করে যারা নিরক্ষর, স্থায়ী চাকরি খুঁজে পেতে কঠিন সংগ্রামের সম্মুখীন হয়েছেন।
  • সুলতানা বেগম নিজের পরিবার চালানোর জন্য চায়ের দোকান চালানোর চেষ্টা করেছেন এবং নারীদের পোশাক তৈরি করেছেন, কিন্তু এই উদ্যোগগুলো পর্যাপ্ত আয় নিশ্চিত করতে পারেনি, ফলে পরিবারের আর্থিক সংকট কাটেনি।
  • তাঁর সামান্য কিছু সম্পদের মধ্যে রয়েছে মির্জা মোহাম্মদ বেদার বখতের সঙ্গে তাঁর বিবাহের নথি, যিনি ভারতের শেষ মুঘল সম্রাটের প্রপৌত্র বলে ধারণা করা হয়।

লাল কেল্লার মালিকানা দাবি

  • বেগম একটি আদালত মামলা দায়ের করেছেন, যেখানে তিনি স্বীকৃতি চাইছেন যে, তিনি দিল্লির সুবিশাল ও ইতিহাসবহুল ১৭শ শতকের লাল কেল্লার বৈধ মালিক। এক সময় এটি ছিল মুঘল সাম্রাজ্যের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু।
  • সহানুভূতিশীল কর্মীদের সমর্থনে, বেগমের মামলা তার এই দাবির উপর ভিত্তি করে যে, তাঁর প্রয়াত স্বামীর বংশপরিচয় শেষ মুঘল সম্রাট বাহাদুর শাহ জাফরের সাথে যুক্ত। তবে ১৮৩৭ সালে জাফর সিংহাসনে বসার সময়, মুঘল সাম্রাজ্য সংকুচিত হয়ে শুধুমাত্র রাজধানীর সীমানার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ব্রিটিশ ব্যবসায়ীদের বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তখন পর্যন্ত সমগ্র ভারত জয় করে ফেলেছিল।
  • তবু আশা কখনো মরে নাI সুলতানা বেগম দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে বলেন যে, তাঁর সম্পূর্ণ আস্থা রয়েছে ভারত সরকারে। তিনি আশা করেন যে, সরকার ন্যায়বিচার করবে এবং সম্পত্তি তার প্রকৃত উত্তরাধিকারীর কাছে ফিরিয়ে দেবে।

.

ব্রডকাস্ট চ্যানেল

ডেইলি ডিজিটাল নিউজ পেপার