০৬ জানুয়ারি ২০২৫

জারিন খানের বিরুদ্ধে মামলা খারিজ, চুক্তিভঙ্গ নিয়ে ফৌজদারি মামলা অপ্রয়োজনীয়: হাইকোর্ট

চুক্তিভঙ্গের বিষয়ে অভিনেত্রী জারিন খানের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের কালীপূজা অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগে দায়ের করা ফৌজদারি মামলা খারিজ করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। মামলা অপ্রয়োজনীয় ও অনুপযুক্ত বলেছে কোর্ট।

মামলার পটভূমি ও অভিযোগ

  • ২০১৮ সালের কালীপূজাতে শহর কলকাতাতে আসার কথা ছিল জারিন খানের। কিন্তু কথা দিয়েও কথা রাখেননি তিনি।
  • কালীপূজা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার জন্য জারিন খান চুক্তিবদ্ধ ছিলেন। কিন্তু চুক্তিভঙ্গ করেন তিনি।
  • ২০১৮ সালে কলকাতায় ছয়টি কালীপূজা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার জন্য জারিন খানের কথা ছিল।
  • অভিযোগ অনুযায়ী জারিন খান, ৮টি কালীপূজা অনুষ্ঠানে অতিথি শিল্পী হিসেবে অংশগ্রহণের জন্য ১২ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ৫ নভেম্বর ২০১৮-তে তিনি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হননি, যার ফলে আয়োজকদের ৪২ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়।
  • জারিন খানের সাথে এই অনুষ্ঠানে আসার জন্য চুক্তি সই করায় ফিনিক্স ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট। কিন্তু কথা দিয়েও কথা না রাখার জন্য ফিনিক্স ট্যালেন্ট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার মালিক বিশাল গুপ্ত অভিযোগ করেন অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে।
  • এমনকি টাকা ফেরত চাইলে নাকি জারিন খান আন্ডারওয়ার্ল্ডের মাধ্যমে খুনের হুমকিও দেন। এর ভিত্তিতে, ২০১৮ সালের ১৬ নভেম্বর নারকেলডাঙা থানায় এফআইআর দায়ের করা হয়।
  • এই মামলায় ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারা প্রয়োগ করা হয়, যার মধ্যে ছিল, ধারা ৪০৬ – বিশ্বাসভঙ্গ, ধারা ৪২০ – প্রতারণা, ধারা ৫০৬– হুমকি প্রদান, ধারা ১২০বি – অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র। এরপরেই গ্রেপ্তার করা হয় অভিনেত্রীকে।
  • ২০১৮ সালের ১১ ডিসেম্বর সিয়ালদহ আদালত থেকে জামিন পান জারিন খান। নিম্ন আদালত তাঁকে তদন্তে সহযোগিতা করার নির্দেশ দেয়। ২০২৩ সালে পুলিশের পক্ষ থেকে দাখিল করা হয় মামলার চার্জশিট ।

কি বলল হাইকোর্ট ?

  • বিচারপতি বিভাস রঞ্জন দে মামলাটি খারিজ করে বলেন,"এই গোটা বিষয়টি একমাত্র চুক্তিভঙ্গের মামলা হতে পারে, যা দেওয়ানি আদালতে নিষ্পত্তি হওয়া উচিত। ফৌজদারি আদালত চুক্তিভিত্তিক বিরোধ মেটানোর জন্য নয়, বা কাউকে চাপ প্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে না।"
  • এছাড়াও আদালত জানায়, মুম্বাইয়ের একটি দেওয়ানি আদালতে একই বিষয়ে মামলা বিচারাধীন রয়েছে, তাই একই ঘটনার জন্য ফৌজদারি মামলা চালানোর প্রয়োজন নেই।
  • জারিন খানের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অয়ন ভট্টাচার্য, প্রিয়াঙ্কা আগরওয়াল ও প্রিয়াঙ্কা সরকার আদালতে সওয়াল করেন।
  • অভিযোগকারীর পক্ষে সিনিয়র অ্যাডভোকেট সৌরভ চট্টোপাধ্যায়, সঙ্গে সত্যদ্রু লাহিড়ী ও জ্যোতির্ময় তালুকদার মামলাটি পরিচালনা করেন।
  • রাজ্যের পক্ষে থেকে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী মধুসূদন সুর ও দীপঙ্কর প্রামাণিক।
  • জারিন খানের আইনজীবীরা দাবি করেন, এই মামলা কেবল তাঁকে চুক্তিভিত্তিক বিরোধ মীমাংসার জন্য মানসিক অত্যাচার। অপরদিকে, অভিযোগকারীরা অভিনেত্রীর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, বিশ্বাসভঙ্গ ও মানহানির অভিযোগ তোলেন।
  • কিন্তু দীর্ঘ কয়েক বছর এই বিষয়ে মামলা চলার পর অবশেষে, অভিনেত্রী জারিন খানের বিরুদ্ধে ২০১৮ সালের কালীপূজা অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত থাকার অভিযোগে দায়ের করা ফৌজদারি মামলা খারিজ করে এবং শুধু চুক্তিভঙ্গের রায় দিয়েই দায় সেরেছে।
  • আদালত স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছে যে, এ ধরনের দেওয়ানি বিরোধের ক্ষেত্রে ফৌজদারি মামলা অপ্রয়োজনীয় ও অনুপযুক্ত।
  • এই রায়ের ফলে দীর্ঘ ছয় বছর পর আইনি জটিলতা থেকে মুক্তি পেলেন অভিনেত্রী জারিন খান।

.

ব্রডকাস্ট চ্যানেল

ডেইলি ডিজিটাল নিউজ পেপার